মো:মনির খান : আমাদের বর্তমান সমাজে পিতামাতার অবাধ্যতা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রধান একটি কারণ হল পিতামাতার অধিকার সংক্রান্ত একপাক্ষিক আলোচনা। সমাজে পিতামাতার প্রতি সৃষ্টি হওয়া অধিকাংশ অবাধ্যতার পিছনের গল্প হল, বাবা মা কর্তৃক সন্তানের যথাযথ অধিকার আদায় না করা।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় বাবা মা সন্তানের প্রতি দৃষ্টি রাখছে না,সন্তান ছেলে হোক কিংবা মেয়ে তাদের প্রতি মা বাবার যে একটা দায়বদ্ধতা সেটা পরিপূর্ণ করতে তারা ব্যর্থ হচ্ছে,এতে ব্যক্তি থেকে শুরু করে পুরো বিশ্বজুড়ে অন্যায় অবিচারের সাথে লিপ্ত হতে হচ্ছে আজকের জেনারেশন,,এমনকি পিতামাতার উপর সন্তানের অধিকার এর ধারণাটাই অনেকের কাছে আজীব লাগবে।
কিন্তু এখানে অধিকারের প্রসঙ্গ মোটেও একপাক্ষিক না, বরং দ্বিপাক্ষিক। কোনো এক পক্ষে জুলুম হলে ফলাফল স্বরূপ দ্বিতীয় পক্ষে জুলুম হওয়াটা প্রায় নিশ্চিত বিষয়। ব্যতিক্রম তো কিছু থাকবেই।সন্তানকে যথাযথ দ্বীনি শিক্ষা প্রদান করা সন্তানের অধিকার এবং বাবা মায়ের কর্তব্য। তারা সন্তানকে এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করলে নিজেরাও সন্তান কর্তৃক অধিকার হরণের শিকার হওয়ার প্রবল আশংকা আছে।আর আজকাল আমরা সেটার শিকার হচ্ছি যেটার শিকার হতে হয় ইসলাম থেকে কোরআন আর হাদিস থেকে পিছনে পা বাড়ালে, যথাসময়ে তাদের বিবাহসাদিও সন্তানের অধিকার। উপযুক্ত কারণ ছাড়া নিছক পার্থিক স্বার্থ ও সামাজিক প্রথার কারণে সন্তানের এই অধিকারে গণ্ডগোল করা সন্তানকে অবশ্যই অবাধ্যতার দিকে ঠেলে দিবে।
প্রমান তো দেখাই যাচ্ছে চারদিকে অন্ধকার আলোর কোন ছোঁয়া পাচ্ছি না,,প্রতি সেকেন্ড যেনো হতাশায় কেটে যায়,অবিচার বেড়ে গেছে সন্তান পিতামাতার অবাধ্য হচ্ছে,সারাজীবন কষ্ট করে লালনপালন করেও সেই সন্তানের জন্য মুখ দেখাতে পারছে না জন্মদাতা মা-বাবা।বর্তমান সমাজে পিতামাতা কর্তৃক সন্তানের যেই দুটি অধিকারে সবচেয়ে বেশি অবহেলা করা হয় তার একটি হল সঠিক ইসলাম শিক্ষা না দেওয়া,, আর দ্বিতীয়টি হল বিবাহ। সন্তানকে ইসলামী মূল্যবোধ এবং আল্লাহর উবুদিয়্যাতের উপর প্রতিপালন করা পিতামাতার আবশ্যিক দায়িত্ব। কিন্তু হয়তো তারা ইসলামিক শিক্ষা দেননা, কিংবা দিলেও ইসলামের উল্লেখিত মানদণ্ড ঠিক রাখেন না। যার দরুন এই সন্তানই পরবর্তীতে সমাজে আরো বহুমুখী অন্যায়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি বাবা মায়ের জন্যও সে হয়ে উঠে বিরক্তিকর.আর বিবাহের প্রশ্ন আসলে প্রথমে একটা বাস্তবতা স্বীকার করা জরুরী।আজকের সমাজের একটা প্রচলিত সমস্যা, ছেলে হোক বা মেয়ে হোক, তাদের বৈধ দ্বীনি কর্মকান্ড গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না,কিন্তু অবৈধ এবং অকর্মকান্ড গুলো খুবই সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করে আর মানুষের কাছে তুলে ধরে।।যে সন্তান’কে নিয়ে পিতামাতার গর্ব করার কথা সে যদিও এখানে সবর করাই সন্তানদের জন্য জরুরী। কিন্তু সবরের চর্চা সবার দ্বারা সম্ভব না এবং নির্দিষ্ট সীমার পর সবর করাও কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। ফলে তারা হয়ে উঠে চরম উচ্ছৃঙ্খল আর অবাধ্য। আমাদের সমাজে অনেক বাধ্য সন্তান জীবনের একটা সময়ে অবাধ্যতার পথকে বেছে নিয়েছে অধিকারের নামে পিতামাতার অনধিকার চর্চার কারণে। তবুও আমরা সবরকে প্রাধান্য দিব যেমন তারা আমাদের প্রতিপালন করতে গিয়ে সবর অবলম্বন করেছেন,,,যে সন্তান’কে নিয়ে পিতামাতার গর্ব করার কথা সন্তান ছোট থাকাকালীন পিতামাতা গর্ব করবে বলে গুচ্ছ গুচ্ছ স্বপ্ন বুনে চড়ুই পাখির মতো তা ধ্বংস হয়ে যায় সময়ের সাথে সাথে এমনও পর্যায়ে পৌঁছে যায় পিতামাতা নিজেকে লুকিয়ে লুকিয়ে রাখে সমাজের কাছে সন্তান এর অবাধ্যতার কারণে।
বাবা মায়ের অবশ্যই নিজের অধিকারের সীমা ও এর প্রয়োগ ক্ষমতা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। তাকে বুঝতে হবে আমি যেটা অধিকার ভাবছি সেটা আসলেই আমার অধিকারের মাঝে পড়ছে কিনা। তাদেরকে বুঝতে হবে কোনটা অবাধ্যতা আর কোনটা অবাধ্যতা না। সন্তানকে এমন কোনো বিষয়ের নির্দেশ দেয়া যাবে না, যেটা অমান্য করা তার জন্য দ্বীনি কারণে আবশ্যক হয়ে থাকে। তার কাছ থেকে এমন কোন কামনা করা যাবে না, যেটা তার দ্বীন তার থেকে কামনা করেনা। ফলশ্রুতিতে যেই নেতিবাচক উত্তর আসবে সেটা অবাধ্যতা না, সেটাই রবের আনুগত্য। রবের অবাধ্যতা করা লাগে, এমন কারো আনুগত্যের অধিকার মাখলুকের নেই।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হল বাবা মা, সন্তানাদি, স্বামী-স্ত্রী সহ মুসলিমদের প্রতিটি সম্পর্কের ভিত্তিই আল্লাহর উবুদিয়্যাত। সবাইকে একই সাথে উবুদিয়্যাতের রশ্মিকে আঁকড়ে ধরতে হবে। তবেই মুসলিমদের পারস্পারিক সম্পর্ক গুলোর মাঝে ভারসাম্যতা বজায় থাকবে। আর এই রশ্মিতে ফাটল ধরলেই একে অন্যের জুলুমের শিকার হবে।তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রশ্মিকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো, কখনো পরস্পরে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেয়ো না।
আপনার মতামত লিখুন :