মেয়র লোকমান হোসেনের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ


আজকালের কণ্ঠ প্রকাশের সময় : জুলাই ১০, ২০২৪, ৬:৩৯ অপরাহ্ন /
মেয়র লোকমান হোসেনের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা বাকেরগঞ্জ বরিশাল : বরিশালের বাকেরগঞ্জে পৌরসভার মেয়র লোকমান হোসেন ডাকুয়ার বিরুদ্ধে শ্রীমন্ত নদী দখল, সরকারি জেলখানার খাল দখল ও পৌর বাস টার্মিনাল, যাত্রী ছাউনি, পাবলিক টয়লেটসহ সড়ক ও জনপদের জমি দখল করে অবৈধ ভাবে পৌরসভার নামে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে শপিং মল, হোটেল রেস্তোরা, দোকান ঘর লিজ দেয়ার নামে ও অধিক মূল্যে ভাড়া দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাকেরগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড ব্রীজ সংলগ্ন শ্রীমন্ত নদীতে হকার্স মার্কেট নির্মান করেছেন মেয়র লোকমান। ওই মার্কেটের চা দোকানী পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম জানান, নির্মিত এই হকার্স মার্কেটে ৪১টি দোকান আছে। ছোট দোকানগুলো থেকে ৮৩ হাজার টাকা অগ্রিম প্রদান করে দোকান নিয়েছেন, যার মাসিক ভাড়া ১৫০০ টাকা। অপর চায়ের দোকানদার সমির জানান, আমি এই মার্কেটে দুটি দোকান নিয়েছি দুই লক্ষ ৫০ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়ে।

প্রতি মাসে দুই দোকানে ভাড়া দেই আট হাজার টাকা। এভাবেই সব দোকানদার অগ্রিম টাকা দিয়ে দোকান ভাড়া নিয়েছেন। পৌরসভার ফান্ডে টাকা জমা দেয়ার নামে মেয়র লোকমান হোসেন প্রায় ৫০ লাখ টাকা নিয়েছেন ওইসব দোকানঘর লিজ দেয়ার নামে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমিতে অবৈধ হকার্স মার্কেট নির্মাণ করে একে দোকান থেকে মাসিক ভাড়া হিসেবে নিচ্ছেন ১৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০০ হাজার টাকা এভাবেই প্রতিমাসে এই মার্কেটের দোকানগুলো থেকে লাখ লাখ টাকা ভাড়া উত্তোলন করা হচ্ছে। যাহার সুনির্দিষ্ট কোন হিসাব নেই পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে।

বাস টার্মিনালের রেস্টুরেন্ট মালিক বাবুল মুন্সি অভিযোগ করে বলেন, পৌর মেয়র আমার থেকে দোকান লিজ দেয়ার নামে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা নিয়েছেন ৫ বছর আগে এখন পর্যন্ত আমাকে কোন কাগজপত্র দেওয়া হয়নি। এছাড়াও উপজেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে বয়ে যাওয়া তুলাতলী নদী হয়ে পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের সদর রোড হয়ে শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া শ্রীমন্ত নদীর সাথে সংযোগ হয়েছে জেলখানার খাল। সরকারি জেলখানার খালের উপর পৌরসভার তত্ত্বাবধানে একটি মসজিদ গড়ে উঠলে সেই মসজিদের নাম ব্যবহার করে মেয়র লোকমান হোসেন গড়ে তুলেছেন শপিং মল মার্কেট।

অবৈধভাবে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে দখল করে নিয়েছে সরকারি এই জেলখানার খাল। আর সেখানেও দোকান ঘর লিজ দেয়ার নামে ৫ লাখ টাকা থেকে শুরু করে ১০ লাখ টাকা অগ্রিম নিয়ে দোকান ঘর ভাড়া দিয়েছেন। যার কোন বৈধ হিসাব নেই পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, বাকেরগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন সড়ক ও জনপদের জমি দখল করে পৌর বাস টার্মিনাল নির্মাণ করেন পৌর মেয়র লোকমান ডাকুয়া। সেই বাস টার্মিনানের দ্বিতীয় তলায় লোকমান হোসেন ডাকুয়া নিজ মালিকানায় গড়ে তুলেছেন এলএফজি চাইনিজ রেস্টুরেন্ট।

ওই বাস টার্মিনালের যাত্রী ছাউনি দোকান ঘর করে শংকর সাহার কাছে ভাড়া দিয়েছেন অগ্রিম ৫ লক্ষ টাকা নিয়ে। ওই বাস টার্মিনালে যাত্রীদের জন্য বাস কাউন্টার করা অর্ধশতাধিক দোকান ঘর ৫ লাখ থেকে ৭ লাখ টাকা অগ্রিম নিয়ে অধিক মূল্যে ভাড়া দিয়ে আসছেন। দোকান মালিকদের থেকে লিজ দেয়ার নামে লাখ লাখ টাকা নিলেও তাদের কোন দলিল বা চুক্তিপত্র কিছুই দেয়নি পৌর মেয়র। বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই এই বাস টার্মিনাল থেকেও ৫০ লাখ টাকার বেশি দোকান ঘর ভাড়া দিয়ে অগ্রিম নিয়েছেন মেয়র লোকমান।

এছাড়াও পৌর সুপার মার্কেটে নকশার বহির্ভূতভাবে সিঁড়ির নিচে ও মার্কেটের বাহিরে একাধিক দোকান ঘর নির্মাণ করে লিজ দেয়ার নামে দোকান ঘর ভাড়া দিয়ে অগ্রিম লাখ লাখ টাকা নিয়েছেন। পৌর সুপার মার্কেটেও প্রায় শতাধিক দোকানঘর ভাড়া দিয়ে প্রত্যেক দোকান মালিকদের থেকে ১ লাখ থেকে শুরু করে ২ লাখ আড়াই লক্ষ টাকা অগ্রিম নিয়েছেন মেয়র লোকমান হোসেন ডাকুয়া। এই মার্কেট থেকেও প্রায় কোটি টাকা অগ্রিম নিয়েছেন তিনি। কোটি কোটি টাকা অগ্রিম নিয়ে কোন খাতে ব্যয় করেছেন যাহার হিসাবি নেই পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে।

পৌর মেয়র লোকমান হোসেন ডাকুয়া বলেন, হকার্স মার্কেট নির্মাণে যে টাকা খরচ হয়েছে সেই হিসেবে দোকানদারদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি যখন দরকার হবে তখন তাদের জমি ফেরত দেয়া হবে। এ বিষয়ে পৌর নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম বলেন, হকার্স মার্কেটের দোকান লিজ দেয়া ও অগ্রিম টাকা নেয়ার কোন বিধান নেই। যদি কেউ নিয়ে থাকেন সেটা অবৈধ।

বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ খালেদ বিন অলীদ বলেন, সরেজমিনে গিয়ে শ্রীমন্ত নদী ও জেলখানার খালটির বর্তমান পরিস্থিতি দেখে দখলদারদের তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, নদী ও জেলখাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় তারা যদি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সহায়তা চায় সে ক্ষেত্রে আমরা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে তাদের সহযোগিতা করব।