জাহেদুল ইসলাম রতন, লালমনিরহাট : বেশী লাভের আশায় লালমনিরহাট প্রতি বছর আগাম আলু চাষ করেন কৃষকরা। জেলার ৫টি উপজেলায় এখনো রোপা-আমন ধান কাটা শেষ হয়নি। তবে ফাঁকা হওয়া জমিগুলোতে এখন আগাম আলু চাষে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষিরা। বাজারে এবার আলুর উচ্চ মুল্য থাকায় আগাম জাতের আলু চাষ করে আরো লাভবান হওয়ায় আশায় অন্যান্য বারের তুলনায় এবার অধিক পরিমাণে আলু চাষে ঝুঁকে পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। জেলাজুড়ে ডায়মন, অ্যাস্টেরিক ও কার্টিনাল নামে আগাম জাতের আলু চাষ করা হয়েছে। এ তিন জাতের আলু রোপণের ৫৫ থেকে ৬০ দিনের মাথায় বিক্রির উপযোগী হয়।
সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর,বড়বাড়ী, হারাটি,বুড়িরবাজার,ঢেপঢবির বাজার,কুলাঘাট সহ কয়েকটি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে কৃষকরা আলু চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এ সময় কথা হয় সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের পশ্চিম হাতুড়া গ্রামের কৃষক নুরনবীর সাথে। তিনি বলেন, বাজারে যার আলু যত আগে উঠবে, তার লাভ তত বেশি। তাই আগে ভাগেই আলু আবাদ করছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলেও এবার বীজের দাম একটু বেশি এ বছর কৃষকরা বাইরে থেকে আলুর বিজ কিনছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। যা গত বছরের তুলনায় দাম বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। আর এক মৌসমের আগের হিসেবে এই দাম দ্বিগুণের বেশি। প্রয়োজনীয় সারের সরবরাহও প্রতি বস্তায় ২ থেকে ৩০০ টাকা বেশি। তিনি এবার ২ একর জমিতে আগাম জাতের আলু রোপন করছেন বলে জানান। একই গ্রামের হেলাল হোসেন বলেন, তিনিও এবার ১ একর জমিতে আগাম জাতের আলু চাষের প্রস্তুতি নিয়েছেন। তিনি জানান, প্রতি বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলু রোপনে খরচ হচ্ছে ৩৫-৪০ হাজার টাকা। বিঘায় আলু উৎপাদন হবে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ মন। বাজারে আগে আলু তুলতে পারলে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হবে প্রায় ৮০ থেকে ১শ টাকা দরে ।
এতে বিঘা প্রতি আলু বিক্রি করে খরচ বাদে লাভ পাওয়া যাবে প্রায় ৪০ হতে ৫০ হাজার টাকা। সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার সোহায়েল আহমেদ জানায়, চলতি বছর সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আলু চাষের জন্য আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় আগাম ধান কর্তনের পর কৃষকরা আলু চাষ আবাদ শুরু করেছেন। প্রতি হেক্টর জমিতে ২৮.৫ থেকে ২৯ টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রত্যাশা করছে কৃষি বিভাগ।
মহেন্দ্রনাগর ইউনিয়নের বুড়িরবাজার এলাকার আলু চাষী, রশিদ মিয়া জানান, আগাম জাতের আলু চাষ করে ভালো দাম পাওয়া যায়। তাছাড়া ৬০-৬৫ দিনের মধ্যে এ আলু ক্ষেত থেকে তোলা যায় বলে কৃষকদের আলু চাষের আগ্রহ বেশি। অপরদিকে বর্তমান সময়ে গ্রামাঞ্চলে কোন কৃষি কাজ না থাকা আগাম জাতের আলু চাষের কারনে শ্রমিকদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি এ কাজে নারী শ্রমিকরাও অংশ গ্রহন করছে। তবে এ ক্ষেত্রে কিছুটা শ্রম মূল্য বৈষম্য লক্ষ্য করা গেছে। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুরুষ শ্রমিকদের হাজিরা হিসাবে ৫শ টাকা করে দেওয়া হলেও নারী শ্রমিকদের ৩শ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। তবে শ্রমিকরা জানান, আগে এ সময়টা কোন কাজ থাকতো না। এখন (আগুর) আগাম আলু চাষ হওয়ায় কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সাইফুল আরিফিন জানান, লালমনিরহাট সদর উপজেলা থেকে প্রায় ৫০ ভাগ আলুই উৎপাদন হয়ে থাকে। আলু চাষের জন্য এ জেলার মাটি উপযুক্ত। উপজেলা কৃষি উপ-সহকারী অফিসাররা মাঠে কাজ করছেন কৃষকদের পরামর্শ দিতে আলু চাষের জন্য। চলতি বছরের এ জেলায় ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষাবাদ করা হবে। এবার প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় ২৯ টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রত্যাশা করছে কৃষি বিভাগ।
আপনার মতামত লিখুন :