সম্পাদকীয় : রাজধানীর জলাবদ্ধতা দেশে এক বড় আলোচিত বিষয়। ভারি বৃষ্টিপাতেই তলিয়ে যায় রাজধানীর সড়ক ও ফুটপাত। পানি ঢুকে পড়ে বাসাবাড়ি ও মার্কেটেও। জলজটের কারণে সড়কগুলোয় সৃষ্ট যানজটে নাকাল হন রাজধানীবাসী। এক কথায়, তাদের সহ্য করতে হয় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। শুধু তাই নয়, বর্ষা এলেই পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন অনেকে।
এটাই যখন ফি বাৎসরিক বাস্তবতা, তখন রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে গত ৩ অর্থবছরে ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা খরচ করা হলেও জলে গেছে পুরো টাকাই। ড্রেনেজ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নসংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকল্পে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে ব্যয় করা হয়েছিল এই টাকা। শুধু এ টাকাই নয়, গত দুই দশক ধরে রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনের নামে ব্যয় করা হয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। নিষ্ফল হয়েছে সব উদ্যোগ। কিছুতেই হচ্ছে না টেকসই সমাধান।
রাজধানীর জলাবদ্ধতার কারণ বহুবিধ –
##প্রথমত : পানি নিষ্কাশনের চ্যানেলগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে।
##দ্বিতীয়ত :অধিকাংশ খাল ভরাট ও দখল হয়ে গেছে। ড্রেনেজ, খাল ও নদীর সঙ্গে কার্যকর পানি নিষ্কাশন নেটওয়ার্ক নেই।
##তৃতীয়ত :জলাধার, নিচু জায়গা এবং উন্মুক্ত স্থান কংক্রিট দ্বারা আচ্ছাদিত হওয়ায় পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
কোনো কোনো স্থানে ড্রেনেজ সচল থাকলেও খালসহ অন্যান্য চ্যানেল অকেজো থাকায় পানি সরানো সম্ভব হচ্ছে না। কারণগুলো যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর অজানা, তা নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, তা সত্ত্বেও এত টাকা বিফলে গেল কেন? বলাই যায়, টাকা সুপরিকল্পিতভাবে খরচ করা হয়নি। রাজধানীর জলাবদ্ধতার প্রসঙ্গ এলেই একে অপরকে দায়ী করে থাকে। বস্তুত সিটি কর্পোরেশন ও সরকারের অন্য সংস্থাগুলোর মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে সমন্বিতভাবে। দ্বিতীয়ত, ব্যর্থতার জন্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে জবাবদিহিতা। ইতোমধ্যে যে ব্যর্থতা দেখা গেছে, সেজন্য জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে দায়িত্বপ্রাপ্তদের। বিশাল অঙ্কের টাকা ব্যয় হয়েছে, অথচ যথাযথভাবে হয়নি ড্রেনেজ, খাল ও বক্স কালভার্ট পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ। আমরা মনে করি, রাজধানীর জলাবদ্ধতার জন্য ঢাকা ওয়াসা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড- উভয় পক্ষই সমানভাবে দায়ী। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনও এ দায়িত্ব এড়াতে পারে না। শেষ কথা, রাজধানীবাসী জলাবদ্ধতা আর দেখতে চায় না। এ সমস্যার টেকসই সমাধান করতে হবে অবশ্যই।