আগামী নির্বাচনে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত বাহাউদ্দিন নাছিমের

নিউজটি শেয়ার করুন

আজকালের কন্ঠ ডেস্ক : আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। সেজন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সৎ, যোগ্য ও দক্ষদের অগ্রাধিকার দেবে। এক কথায় নির্বাচনে জয়ী হবেন এমন প্রার্থী দেবে। এ কারণেই আগামী নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রার্থী মনোনয়নে বড় পরিবর্তন আসবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। আজকালের কন্ঠ -কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগে যোগ্য প্রার্থীর অভাব কখনই ছিল না, আগামীতেও সৎ, যোগ্য প্রার্থী বাছাই করতে কোনো বেগ পেতে হবে না। যেসব নেতা নিজেদের সর্বেসর্বা মনে করেন, নিজেকে মহাজন মনে করেন তাদের বিষয়ে দল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, পরিবর্তন আসবেই।’

আজকালের কন্ঠ: আগামী নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি রাজপথ উত্তপ্ত করছে সেটা মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি কী?

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম: আমরাও তো মিছিল-সমাবেশ করছি। আমরা কি মারামারি করছি? মারামারি করতে পারি না। আমরা চাইলে প্রতিদিন মারামারি করতে পারি না? আমরা কী করি?

আজকালের কন্ঠ: বিএনপি বলে পুলিশ ছাড়া আপনারা দাঁড়াতে পারবেন না।

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম: আওয়ামী লীগের ইতিহাস দুই, চার, পাঁচ বছরের নয়। আমরা যখন পার্লামেন্টে বিরোধী দল ছিলাম, তখনই আমাদের সঙ্গে কয়টা দল আন্দোলন করে জিততে পেরেছে। আমরা যখন নিয়মিত বিরোধী দলে ছিলাম ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর, প্রথম দিকে আমাদের অনেক ধকল গেছে। আমাদের সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৯৮১ সালে দেশে আসার পর আমাদের সঙ্গে রাস্তায় আন্দোলন-সংগ্রামে নেমেছেন। সেখানে আমাদের মেরেছে, অত্যাচার করেছে, শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত জয় আমাদেরই হয়েছে। আমাদের পুলিশ, সেনাবাহিনী দিয়েও রুখতে পারেনি। আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। মারামারি করে ওই ফাঁদে যেতে চাই না। আমরা সাংগঠনিক নেতা-কর্মীদের শক্তিশালী করার জন্য যা করার সেটা করব। তবে যদি মানুষের উপর হামলা হয়, জ্বালাও-পোড়ায় শুরু হয় ব্যাপকভাবে, তখন তো জনগণের পাশে দাঁড়াতে হয়। জনগণকে তো আমরা বিপদে ফেলতে দেব না এটা যেমন সত্য, আবার জনগণকে নিয়ে কেউ খেলা করবে, জনগণকে ফাঁদে ফেলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে রাজনীতির ফায়দা লুটবে- সেটা কি আমরা মেনে নেব? সহ্য করব? জনস্বার্থেই তাদের রুখতে হবে। সেই রুখার নামে কেউ ফাঁদ পাততে পারবে না। ফাঁদ পাততে দেব না।

আজকালের কন্ঠ: আওয়ামী লীগ কি বিএনপিকে সুযোগ করে দিচ্ছে?

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম: প্রশ্নই আসে না। সেই ভুলটা কখনই করব না। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে অনেক পরিপক্ব। এই দলটা এমনি এমনিই ৭৫ বছর পার করেনি। এই দলের অনেক ইতিহাস ঐতিহ্য আছে। কারো ফাঁদে আওয়ামী লীগ কখনো পা দেয়নি, দেবে না। এটা একটা প্রতিষ্ঠান। এটা একটা মহীরুহের মতন। চাইলেও কেউ ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করা, সেটা তো সোজা না। কোনো কর্মী বা কোনো নেতা এরকম হয়তো ফাঁদে ফেলার কথা বলে ফেলতে পারে। তার মানে এটা না, ফাইনালি আমরা ওটাতে যাব না। আমাদের দলে ৫০ বছরের রাজনীতি করার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নেতা আছে। আমাদের মতো ৪০-৪২ বছর পার করা রাজনীতিবিদদের সংখ্যাও কম না। প্রগতিশীল চিন্তাসম্পন্ন, খারাপ, ভালো, মন্দ সবই থাকে। এত সহজে ফাঁদে ফেলে দেওয়া সম্ভব নয়। হয়তো কেউ কেউ চিন্তা করছে, ভাবছে। আর একটা ১/১১ সৃষ্টি করা এত সোজা নয়। আইনি কাঠামো সংবিধানের ভেতরে। ওই জায়গাগুলো শক্তভাবে করা। চোরাপথে যাওয়ার সুযোগ নেই। ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলার চিন্তা কেউ করবে না।

আজকালের কন্ঠ: বিএনপি কি নির্বাচনে আসবে?

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম: অবশ্যই আসবে। তারা আন্দোলনের কথা বলছে তো। আন্দোলন তো করতে অসুবিধা নেই।

আজকালের কন্ঠ: আওয়ামী লীগের শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বেসুরো গাইছে কেন? তারা কি প্রত্যাশিত কিছু না পেয়ে…

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম: কেবল তো শুরু, শেষ বেলায় বলা যাবে কী হবে। অনেক কথা বলবে। তারা বিরোধী রাজনৈতিক দল, তারা সংসদে বিরোধী দলের অবস্থানে আছে। নির্বাচন ঘিরে জনগণকে আকৃষ্ট করার জন্য নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করার জন্য ঐক্যবদ্ধ করার জন্য কথা বলবে না? আমরা বলি না কথা?

আজকালের কন্ঠ: তাহলে কি আওয়ামী লীগই সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে জাতীয় পার্টিকে কথা বলার?

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম: এটা তো সময় এলে বলা যাবে। সময় আসেনি এসব কথা বলার। দেশটা গণতন্ত্রের পথে হাঁটবে, না দেশটাতে বিরাজনীতিকরণ যারা চায় তারা দেশটাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে? আমার তো মনে হয় কেউ চায় না দেশটাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে।

আজকালের কন্ঠ: বিএনপি নির্বাচনে না এলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে কি?

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম: তারা জোট করছে, অনেক করেছে, করবে। অনেক জোট করেছে। জোট কত প্রকার কী কী তার সংখ্যা কত? সংখ্যা তত্ত্বের ভিত্তিতে তো হবে না। জনগণকে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা, দক্ষতা, জনগণের বিশ্বাস, আস্থার জায়গায় ওই জোটে কতগুলো দল, দলের সংখ্যা কতটা? কত হাজার নেতা আছে? সেটা বিষয় নয়। বিষয়টা হলো জনগণের আস্থা বিশ্বাসের জায়গা ওই নেতাদের উপর আছে কি না। অতীতে তারা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে তারা দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য কোনো অবদান রাখতে পারেনি। দেশ, জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তাদের ছিল কি না? তাদের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি ছিল কি না? এগুলো মেনে দেখেই মানুষ সিদ্ধান্ত নেবে। দেশের মানুষের কাছে কিন্তু গত ৫০ বছরের ইতিহাসের রেকর্ড আছে।

আজকালের কন্ঠ: বিএনপি তো সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের প্রস্ততি নিচ্ছে? এবিষয়ে আপনাদের ভাবনা কী?

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম: তাদের প্রস্তুতির তো কোনো শেষ নেই। গত ১৩ বছর ধরে প্রস্তুতিই নিচ্ছে। তারা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে নিতে আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করব। দেশের মানুষ যখন নির্বাচনে অংশ নেবে, ঢেউ উঠবে তখন কে কোথায় যাবে, মানুষ কী চায়, কার কী অবস্থা বোঝা যাবে। জনগণের ঢেউ, মানুষের ঢেউ কোথায় কোন দিকে যায়। মার্চ-এপ্রিলে নির্বাচনের ঢেউ উঠবে।

আজকালের কন্ঠ: আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগে বিতর্কিতদের বাদ বা পরিবর্তন আসবে কেমন?

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম: সব সময় জনপ্রিয়তা, সততা, দক্ষতা, কমিটমেন্ট কর্মের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসবে। সেই জায়গাতে কিন্তু জনপ্রিয়তার পাশাপাশি সততা, দক্ষতা, সুশাসন প্রতিষ্ঠার লড়াই সেটাকে আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব দেব।

আজকালের কন্ঠ: আগামী নির্বাচন বেশি চ্যালেঞ্জ মনে হচ্ছে কি না?

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম: প্রার্থীর কোনো সমস্যা আওয়ামী লীগের কখনই ছিল না। জনপ্রিয় নেতা অসংখ্য আছে। সৎ, সাহসী লোককে যোগ্যতা অনুযায়ী নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ। এবার সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে। এটা সহজভাবেই বলা যায়। অনেকে আছে অনেক জায়গায় অনেক নেতা তিনিই নিজেকে সর্বেসর্বা মনে করেন। তিনিই একমাত্র মহাজন। এটা এবার গুরুত্ব দেওয়া হবে না বলেই পরিষ্কার করে বলে দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আওয়াজ উঠেছে। এটার প্রতিফল আগামী নির্বাচনে হবে।

আজকালের কন্ঠ: বিএনপির এক নেতা বলেছেন জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সখ্য চলছে। এবিষয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান কী?

 

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম: তিনি ব্যক্তিগতভাবে হয়তো জামায়াতিদের পছন্দ করেন না। কিন্তু উনার দলের বন্ধুত্বপুর্ণ সম্পর্ক হলো জামায়াতিদের সঙ্গে, যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে, সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে। তারা বিএনপির দায় আওয়ামী লীগের ঘাড়ে চাপানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেন। বিএনপি জামায়াতিদের বিশ্বস্ত বন্ধু, স্থায়ী বন্ধু। সেটা হয়তো তিনি মানতে পারেন না, সহ্য করতে পারে না। যেকারণে দায় থেকে নিজেও বাঁচতে চায়। বিএনপিকেও রক্ষা করার অপচেষ্টা করা। এটার মানেই আওয়ামী লীগের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা।

আজকালের কন্ঠ: আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতি কী?

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম: আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক প্রস্তুতি চলমান প্রক্রিয়ার একটা অংশ। আমাদের দলে এক কাউন্সিলের পর পরবর্তী কাউন্সিল বা সম্মেলনের আগে প্রতি বছরই আমরা সদস্য নবায়ন করি। সম্মেলনকে টার্গেট ধরেই আমাদের সদস্য সংগ্রহ এবং তৃণমূলের আওয়ামী লীগকে আমরা সংগঠিত করি। এটা দেশব্যাপী সব সময়। তৃণমূলের আওয়ামী লীগের উপর আমরা সবসময় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেই এবং সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার কারণে আওয়ামী লীগের মূল শক্তিটা জাগ্রত হয়। আরও শক্তিশালী হয়। তৃণমূলের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দল যদি সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে সেক্ষেত্রে নির্বাচন যখন আসে, তখন যেকোনো নির্বাচনে জনগণের সমর্থন পেতে কোনো অসুবিধা হয় না। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সব সময় আমরা প্রান্তিক পর্যায়ে সংগঠনকে গড়ে তোলার চেষ্টা করি, এটাই আওয়ামী লীগের প্রাণ। আওয়ামী লীগের শক্তির উৎস জনগণ। জাতীয় নির্বাচনে জনগণের সমর্থন ধরে রাখার জন্য আমরা ওখানেই মূলত কাজটা করি। নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে আগামী প্রজন্মের জন্য এবং বর্তমান প্রজন্মের জন্য দলের লক্ষ্য উদ্দেশ্য মিলিয়ে কাউন্সিলের ভেতর দিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা আসে। আগামী নির্বাচনে জনগণের প্রতি আমাদের কী অঙ্গীকার, আমরা কী করতে চাই, আমাদের লক্ষ্য কী- সেটা পরিষ্কারভাবে দলীয় নেতা-কর্মী এবং জনগণের কাছে মূল বিষয়টা বেরিয়ে আসে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দলের নীতি আদর্শ যুগোপযোগী করা হয়।

আজকালের কন্ঠ: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম: আপনাকেও ধন্যবাদ।

 

শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »