গাইবান্ধা প্রতিনিধি : বয়সের ভারে ন্যুব্জ রহিলা বেওয়া। বার্ধক্যজনিত কারণে নানা রোগে-শোকে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন তিনি। বয়স হয়েছে ৯৫ বছর। চিকিৎসা দূরের কথা, তিন বেলা খাবার জোটানোও তাঁর জন্য কষ্টকর। জীবনের শেষ সময়ে একটু সচ্ছলতার আশায় বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য ধরনা দিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে। আশ্বাস মিললেও এখনো জোটেনি কোনো কার্ড।
রহিয়া বেওয়ার বাড়ি গাইবান্ধা সদর উপজেলার কুপতলা ইউনিয়নের গোডাউন বাজার গ্রামে। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তাঁর জন্মতারিখ ১৯২৪ সালের । সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, বয়স্ক ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীর বয়স সর্বনিম্ন৬২, আর পুরুষের বয়স সর্বনিম্ন ৬৫ বছর। সে অনুযায়ী রহিলা বেওয়া বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্য হলেও এত দিনেও কেউ তাঁর সহযোগিতায় এগিয়ে আসেনি।
এলাকাবাসী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রহিলা বেওয়ার স্বামী অছির উদ্দিন মারা গেছেন প্রায় ৪০ বছর আগে। সহায়-সম্পদ বলতে একখণ্ড বাড়িভিটা ছাড়া তাঁর তেমন কিছু নেই। সংসারজীবনে ৪০ ছেলের মা হন রহিলা বেওয়া। বড় ছেলে মারা গেছে দুই ছেলে প্রতিবন্ধী ও এক ছেলে দিনমজুরি করে পেটের আহার জোগাড়।
রহিলা বেওয়া বলেন, ‘স্বামী মারা যাওয়ার পর হামি বেটার (ছেলে) কাছত থ্যাকিত। তার ওপর হামাক পালতে ওর ম্যালা কষ্ট হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘স্বামী মারা যাওয়ার পর খুব কষ্টত আছি। অসুস্থ হলে ঠিকমতো ওষুধ কিনে খ্যাতে পারি না। একটু খ্যায়ে-পড়ে চলার জন্য ম্যালা দিন ধরে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য কত্তবার গেছি, হিসাব নাই। ব্যাবাক খালি কথা দিছে, কেউ কথা থুইনি (রাখেনি)। আর কত বয়স হলে হামাক কার্ড দিবে?’
এর আগের নৌকা মার্কার মনোনীত ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক রহিলা বেওয়াকে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে ১৪ হাজার টাকা হাতিয়ে নিলেও কার্ডও করে দেননি টাকাও ফেরত দেন নি।
এব্যাপারে অভিযুক্ত সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাককের মুঠোফোনে একাধিকবার মন্তব্যের জন্য ফোন দেওয়া হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আবুল হোসেন বলেন, সরকারি অনুদান আসলে আমরা বিধবা রহিলার পাশে দাড়াবো।
এ ব্যাপারে কুপতলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এত বয়সী এক বিধবা নারীর বয়স্ক ভাতার কার্ড হয়নি, এটা আমার জানা ছিল না। আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পর তিনি আমার কাছে এ ব্যাপারে আসেননি। তবে স্থানীয় ইউপি সদস্যের সঙ্গে কথা বলে যৌক্তিকতা থাকলে আমি তাঁর একটা বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেব।’
আপনার মতামত লিখুন :