ইমাম মাহদির ১৭ যুবক ও ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা


আজকালের কণ্ঠ প্রকাশের সময় : মে ৭, ২০২০, ১০:৪৭ অপরাহ্ন /
ইমাম মাহদির ১৭ যুবক ও ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা

আজকালের কন্ঠ ডেস্ক : করোনাভাইরাস কি ইমাম মাহদির আবির্ভাবের পূর্বাভাস? কোনো কোনো বিভ্রান্ত তরুণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন গুজব ছড়িয়ে চলেছে।

কাকরাইল মসজিদের সামনে থেকে ১৭ জনকে সদ্য গ্রেফতার করেছে কাউন্টার টেরোরিজম। এমন আরও কত হাজার লাখ মানুষ ইমাম মাহদির দলে যোগ দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তার হিসাব কে রাখে?

দাজ্জাল ও ইমাম মাহদিকে নিয়ে গুজবের কোনো শেষ নেই। মুসলিম সমাজে হাজার বছর ধরেই চলছে এ ধরনের গুজব। তবু সম্প্রতি যেন এর চর্চা অনেক বেড়ে গেছে। জঙ্গি সংগঠনগুলো এ সব বিষয় নিয়ে বেশ প্রচারণা চালাচ্ছে।

যারা এ নিয়ে খুব মাতামাতি করছে, আপনি চোখ বন্ধ করে বলতে পারবেন, তাদের কোনো না কোনো উগ্রবাদী সংস্থার সঙ্গে সংযোগ রয়েছে।

সাধারণ মুসলিমদের মনে ইমাম মাহদি নিয়ে কৌতূহল আছে। আসলে ইমাম মাহদির বিষয়টি কী? মাহদি কবে আসবেন কোথায় আসবেন এবং তার অবস্থান কেমন হবে ইত্যাদি বিষয়ে অনেক প্রশ্ন মানুষের মনে।

কেবল সাধারণ মানুষ নয় বিজ্ঞ-প্রাজ্ঞ আলেম-উলামাও ধাঁধায় পড়ে যান। খুব কম সংখ্যক লোকই এ বিষয়ে সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।

ইমাম মাহদি কবে আসবেন? এর সরল উত্তর কেয়ামতের আগে।

কেয়ামত কবে হবে? কেউ বলতে পারে না। তাহলে ইমাম মাহদি কবে আসবেন সে কথাও কেউ বলতে পারবে না। যারা এ বিষয়ে কোনো ভবিষ্যৎ বাণী করতে যায় তাদেরকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখুন। তাদের কথা যাচাই করারও প্রয়োজন নেই। ফালতু কথা যাচাই করে সময় নষ্ট করা অর্থহীন ব্যাপার।

এই মুহূর্তে যদি ইমাম মাহদি আরবে আবির্ভূত হন আমরা কী করব? কোটি টাকার প্রশ্ন। দুশ’ কোটি মুসলিম সবাই ইমাম মাহদির দলে যোগ দেয়ার জন্য আরব ছুটে যাবে? আরবে তো এত মুসলমানের জায়গা হবে না।

আরও পঞ্চাশ বছর পর যদি আসেন মাহদি। তখন তো মুসলমানদের সংখ্যা আরও বেশিও হতে পারে। তিনশ’ কোটি মুসলিমকে সঙ্গে নিয়ে ইমাম মাহদি কি ঘুরে বেড়াবেন?

আপনি যে কোনো সাধারণ মুসলমানকে আজকের দিনে যদি প্রশ্ন করেন, যদি জানতে পাও আজ ইমাম মাহদি এসে গেছেন কে কে তার দলে যোগ দিবে? দেখবেন এক ওয়াক্ত নামাজ পড়ে না যে লোকটা সেও হাত তুলে ইমাম মাহদির দলে যোগ দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করছে।

আমাদের কথা হচ্ছে নামাজের বিধানের চেয়েও কি ইমাম মাহদির দলে যোগ দেয়ার গুরুত্ব বেশি? করোনাভাইরাসের সময় অসহায় দরিদ্র মানুষের সেবায় এগিয়ে যাওয়ার চেয়েও কি ইমাম মাহদির দল অধিক গুরুত্বপূর্ণ?

ইসলাম সম্পর্কে যারা ন্যূনতম জ্ঞান রাখে তারা বুঝতে পারবে মূলত এ সব বিষয়ে মাত্রাতিরিক্ত চিন্তা করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত।

ইমাম মাহদিকে না মানলে কী ইমান নষ্ট হয়ে যাবে? এটাও একটা প্রশ্ন। এ সব প্রশ্ন করা হচ্ছে, তার কারণ, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা আমাদের সামনে নেই। হাদীসে মাহদি সম্পর্কে কিছু কথা আছে। কিন্তু এগুলোর কোনো ব্যাখ্যা দেয়া নেই। বিভ্রান্ত প্রচারকরা এ জন্যই এ নিয়ে নানা প্রচারণা চালানোর সুযোগ পায়।

কিছু কিছু বিষয় কমোনসেন্স থেকেই আমাদের বুঝতে হবে। ইমাম মাহদি যদি সারা বিশ্বের মুসলিমকে নির্দেশ দেন তোমরা যে যেখানে আছ যার যার কাজে ব্যস্ত থাক আমার এখানে দল ভারি করার দরকার নেই। যাদেরকে তিনি কাছে ডেকে নেন কেবল তারাই তখন সেখানে যাবে।

সবাই বিনা প্রয়োজনে ভিড় করা হবে তখন তার নির্দেশ লংঘন। তার বিষয়টি ইসলামের মৌলিক আকিদাগত বিষয় নয়। এটা এক বাস্তবতার কথা বলা হয়েছে। তিনি যখন আসবেন তাকে নিয়ে মুসলিমদের মাঝে বিতর্ক হওয়ার কথা নেই।

এমন হবে না যে, কয়েকশ’ লোক মাহদি দাবি করবে আর দলাদলি ও মারামারি করে যে টিকে যাবে সেই আসল মাহদি সাব্যস্ত হবে। এমন কোনো ব্যাপার ঘটবে না। মনে করুন করোনাভাইরাসকে যেমন কেউ অস্বীকার করছে না মাহদি যখন আসবেন তাকে নিয়ে সংশয়ের মতো কোনো পরিবেশ থাকবে না। ভবিষ্যৎ পরিস্থিতিই বলে দিবে কী হবে?

এ নিয়ে মনগড়া বিভিন্ন ব্যাখ্যা দেয়ার চরম মূর্খতা। অনেক জাল হাদীসও রয়েছে তাকে নিয়ে। এ সম্পর্কিত সহি হাদীস খুবই কম। সে সব হাদীসের মর্ম ও ব্যাখ্যা নিয়ে মতানৈক্যের সুযোগও রয়েছে। যে ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের নিয়ত ভালো বলা যায় না। কারণ এ ধরনের মানুষ মনে করে, যারা ইমাম মাহদির সঙ্গে থাকবে তারাই কেবল সঠিক অন্য সবাই ভুল।

এই সতেরজন যেহেতু ইমাম মাহদির দলে যোগ দিতে যাচ্ছিল তাই তারা এবং তাদের মতো আরও গুটি কয় বিভ্রান্ত উজবুক যারা আছে কেবল তারাই তাদের ধারণা মতে সত্যের পতাকাবাহী।

পৃথিবীর আর সব মুসলিম হচ্ছে মুনাফিক। এমন উদ্ভট চিন্তার লোকদের উন্মাদ বলা গেলেও ভালো নিয়ত ওয়ালা মানুষ বলা যায় না। প্রকৃত প্রস্তাবে অজ্ঞতা ও মূর্খতার কোনো চিকিৎসা হয় না। জাহালাত হচ্ছে পৃথিবীতে সবচেয়ে পচা বস্তু। সমাজের জন্য অজ্ঞতার চেয়ে বড় অভিশাপ কিছু নেই।

নির্বুদ্ধিতার একটা সীমা থাকা উচিত। ভালো ভালো পড়াশোনা করা যুবকও এ ধরনের বিভ্রান্তিতে জড়িয়ে পড়ছে। সরকার এদের গ্রেফতার করে কোনো ফায়াদ হবে না। প্রয়োজন গণসচেতনতা সৃষ্টি।

তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারের কারণে যে কোনো কুচক্রী সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। এতে করে মূর্খ অসচেতন লোক যে কোনো নাশকতামূলক কার্যক্রমেও জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।

এই সতেরজন যদি মনে করে থাকে পৃথিবীতে তারা ছাড়া সব শয়তান ও দাজ্জালের দলের, তাহলে তারা যে কোনো সাধারণ মানুষকে হত্যাও করতে পারে। যে কারো অর্থ আত্মসাৎ করতে পারে গণিমতের মাল বলে। কোনো অপরাধই তাদের কাছে অপরাধ থাকবে না। কাজেই এদেরকে মামুলি মনে করা মোটেও ঠিক হবে না।

এরা সমাজে যে কোনো ধরনের বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে পারে যে কোনো সময়। রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতার জন্য এমন অজ্ঞ-মূর্খ অহংকারী লোক হুমকি বলা চলে। আমাদের সবাইকেই সতর্ক থাকতে হবে এ ধরনের মানুষ নামের পশু থেকে। আল্লাহ হেফাজত করুন। ইসলামকে হেয় করার এমন অপচেষ্টা থেকে এ সব অবুঝদের ফিরিয়ে আনুন। আমীন।

আজকালের কন্ঠ /এমকে