দুশ্চিন্তায় পড়েছে আলু চাষিরা এবছর হিমাগারের ভাড়ায় নিয়ে
আজকালের কণ্ঠ
প্রকাশের সময় : মার্চ ১৩, ২০২৫, ৩:৫৭ অপরাহ্ন /
০
লালমনিরহাট প্রতিনিধি : এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে উৎপাদন খরচের তুলনায় বাজারে আলুর দাম কম থাকায় ও হিমাগারে ভাড় আকস্মিক বৃদ্ধির কারণে কৃষকদের মধ্যে অসন্তোষ ও হতাশা বিরাজ করছে। এছাড়াও আকস্মিক হিমাগার ভাড়া বাড়ানোর ফলে লোকসানের আশঙ্কায় পড়েছেন লালমনিরহাট জেলার আলু চাষিরা।
জেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে লালমনিরহাটের ৫ টি উপজেলায় ৭ হাজার ৮ ০৬ হেক্টর জমিতে কার্ডিনাল, ডায়মন্ড,বগুরাই, বিলাতিসহ অন্তত ৮ -১০টি দেশি-বিদেশি জাতের আলুর আবাদ হয়েছে। এ পরিমাণ জমি থেকে এবার প্রায় ২ লক্ষ হাজার মেট্রিকটন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ইতোমধ্যে ৬৫ শতাংশ জমি থেকে আলু উত্তোলন শেষ হয়েছে। যা চলবে মার্চ মাস পর্যন্ত। এবার জেলায় সবচেয়ে বেশি আলুর আবাদ হয়েছে সদর উপজেলায়।
কিছুদিন আগে আকস্মিক হিমাগার ভাড়া বাড়ানোর কারণে সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগরে ভাড়া বৃদ্ধি প্রতিবাদে লালমনিরহাট – বুড়িমারী মহাসড়কে আলু ফেলে বিক্ষোভ করেছে জেলার আলু চাষিরা ও ব্যবসায়ীরা।
কৃষক ও আলু ব্যবসাযীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে , গত বছর হিমাগারে আলু রাখতে প্রতি বস্তায় ৩০০-৪০০ টাকা নেওয়া হতো। এক বস্তায় ৭০- ৮০ কেজি পর্যন্ত আলু রাখা যেতো। এ বছর হিমাগার মালিকরা বস্তায় ৫০ কেজির বেশি আলু রাখতে দিবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। মাত্র ৫০ কেজি আলু রাখতেই ৮০০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করেছেন তারা। এ ভাড়া গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি । পরবর্তীতে কৃষক এবং ব্যবসায়ীদের আন্দোলনের মুখে পড়ে নতুন করে ভাড়া নির্ধারণ করেন প্রতি কেজি ৬.৭৫ পায়সা এবং প্রতি বস্তায় সর্বোচ্চ ৬০ কেজি আলু।
সদর উপজেলার মহেন্দ্রগর ইউনিয়নের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, তিনবিঘা জমিতে দেশি জাতের আলুর আবাদ করে ৭০-৭৫ মণ ফলন পেয়েছি। ক্ষেত থেকে প্রতি কেজি আলু বিক্রি করেছি ১৪-১৫ টাকা দরে। অথচ প্রতি কেজি আলু আবাদে গড়ে খরচ হয়েছে ১৮- ২০ টাকা। অবশিষ্ট আলু কোল্ডস্টোরেজে রেখে বছরের মাঝামাঝি সময়ে দাম বাড়লে বিক্রি করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এরমধ্যে হুট করে কোল্ড স্টোরেজ মালিকরা ভাড়া বাড়িয়ে দিল। বাড়তি ভাড়ায় সংরক্ষণ করতে গেলে লাভতো দূরের কথা কৃষকের লোকসান ছাড়া উপায় থাকবে না।
উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের কৃষক আখের মিয়া বলেন, গত বছর হিমাগার মালিকরা উৎপাদন মৌসুমে অযৌক্তিক কারণ দেখিয়ে ভাড়া বাড়াতো। ভেবেছিলাম অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে এবার সে সিন্ডিকেট ভাঙবে। এখন দেখছি সিন্ডিকেট ভাঙাতো দূরের কথা, আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠল।
এবিষয়ে লালমনিরহাট কোল্ড স্টোরেজের এসোসিয়েশনে সভাপতি মোকছেদুর রহমান বলেন, গত বছর স্থানীয় কৃষকদের থেকে প্রতি বস্তা (৭০ কেজি) আলু সংরক্ষণে ৩৫০ টাকা এবং ব্যবসায়ীদের থেকে ৩০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছিল। এবার অ্যাসোসিয়েশন থেকে পাঠানো এক চিঠিতে স্পষ্টভাবে প্রতি বস্তায় ৫০ কেজির বেশি আলু না নেয়াসহ ৪০০ টাকার কম না নিতে কড়াকড়ি নির্দেশনা এসেছে। পরবর্তীতে কোল্ড স্টোরেজের এসোসিয়েশনে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভাড়া কমিয়ে সেটি ৬ টাকা ৭৫ পয়সা করা হয়েছে এবং বস্তুায় আলি ৫০ থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৬০ কেজি করা হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড.মোঃ সাইখুল আরেফিন বলেন, উত্তরাঞ্চলে বগুড়া জেলার হিমাগার মালিকদের বরাবর আধিপত্য রয়েছে। মূলত তারাই এ অঞ্চলে আলু সংরক্ষণে প্রতি বছরের ভাড়া নির্ধারণে ভূমিকা রাখেন।
আপনার মতামত লিখুন :