আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রাজ্যের শীর্ষ আইনি পরামর্শদাতা অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি)। তিনি বিভিন্ন মামলায় আদালতে রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করেন। সেই পদ ছেড়ে দিয়েছেন এজি সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। একই সময়ে পদত্যাগ করেছেন হাইকোর্টে রাজ্য সরকারি কৌঁসুলি (পাবলিক প্রসিকিউটর বা পিপি) শাশ্বতগোপাল মুখোপাধ্যায়।
চলতি সপ্তাহে বিদেশ থেকে ইমেলে রাজ্যপালের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন সৌমেন্দ্রনাথ। তাতে পদত্যাগের কারণ উল্লেখ করেননি তিনি। শুক্রবার দেশে ফিরে কার্যত আঙুল তুলেছেন রাজ্যের দিকে।
হঠাৎ কেন এজি ও পিপি পদত্যাগ করলেন, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। মুখ খুলেছেন খোদ বিদায়ী এজি। তার কার্যকালের মেয়াদ ছিল পাঁচ বছরের, তার আগেই কেন পদত্যাগ করতে হল?
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সৌমেন্দ্রনাথ বলেছেন, আমার পদত্যাগের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর দু’দিন কেটে গেলেও রাজ্য সরকার এ সম্পর্কে নীরব ছিল। তারা বলেনি যে এটা ঠিক নয়। তাই আমি পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সসম্মানে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিতে চেয়েছি।
রাজ্যেরশীর্ষ আইনি স্তরে রদবদলের জল্পনা শোনা যাচ্ছিল। এরই মধ্যে পদ ছেড়ে শাশ্বতগোপালের মন্তব্য, হাইকোর্টে শাসকদলের সংগঠন কাজে হস্তক্ষেপ করছিল। যাদের হাইকোর্টে প্র্যাকটিসের অভিজ্ঞতা নেই, তারাও হস্তক্ষেপ করছিলেন। অথচ আমার সময়ে রাজ্য কোনো বড় ফৌজদারি মামলায় হারেনি।
২০১১ সালে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর এজি ও পিপি পদে বারবার বদল ঘটেছে। অনিন্দ্য মিত্র, জয়ন্ত মিত্র, বিমল চট্টোপাধ্যায়, কিশোর দত্ত এই পদের দায়িত্ব সামলেছেন। পিপি পদেও তিনবার বদল ঘটেছে। কেন বারবার পদত্যাগ করছেন শীর্ষ আইনি পরামর্শদাতারা?
সৌমেন্দ্রনাথের বক্তব্য, আমি অত্যন্ত একাগ্রতার সঙ্গে রাজ্যের পক্ষে কাজ করেছি। কিন্তু তার জন্য প্রশংসা পাইনি। যে ধরনের সহযোগিতা এ কাজের জন্য দরকার, দু’বছর ধরেই সেটা পাচ্ছি না। সকলেরই মান-সম্মান রেখে কাজ করার অধিকার আছে। তাই পদ ছেড়ে দিয়েছি।
পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী রাজ্য ত্রিপুরার সাবেক অ্যাডভোকেট জেনারেল বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, এটি একটি সাংবিধানিক পদ। সাংবিধানিক রীতিনীতি মেনে কাজ করতে হয়। কেউ যদি তা করতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হন, তা হলে সম্মানজনকভাবে দায়িত্ব থেকে সরে আসতে পারেন।
শাসক শিবির এই অভিযোগ মানছে না। তৃণমূল নেতা ও আইনজীবী বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় বলেন, রাজ্য সরকার যথাযোগ্য সম্মান দিয়েছেবলেই সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়কে এতো মর্যাদাপূর্ণ পদে বসিয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন এসব কথা বলছেন, সেটা তিনিই বলতে পারবেন।
এজি হিসেবে সৌমেন্দ্রনাথের সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। যদিও বিদায়ী এজি’র বক্তব্য, কোনও দাবি করলেই সেটা সত্যি হয় না। যে কেউ করলেও নয়। পরিসংখ্যান কথা বলবে।
স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতি থেকে গরু-কয়লা পাচার, পুরসভায় নিয়োগ থেকে রেশন দুর্নীতি, এমন নানা মামলায় পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি সরগম। রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী জেলে। আইনি লড়াই হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছেছে।
সৌমেন্দ্রনাথ বলেন, যদি দুর্নীতির অভিযোগ থাকে, তা হলে তদন্ত হওয়া দরকার। রাজ্য তদন্তের দায়িত্ব দিতে পারে, বাকিটা আদালত বিচার করবে। দুর্নীতির সঙ্গে আপোস করা ঠিক নয়। আমি এসব মামলায় সেভাবেই এগিয়েছি, যাতে মামলার নিষ্পত্তি হয়।
আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় বলেন, এজি হিসেবে তিনি যথার্থই বলেছেন। রাজ্য কখনো দুর্নীতিকে চাপা দিতে পারে না। তদন্ত নিয়ে কথা বলতে পারে, তদন্তকারী সংস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। কিন্তু তদন্ত করব না, এটা বলতে পারে না। এটা রাজ্যের অবস্থান হতে পারে না, কোনো ব্যক্তির অবস্থান হতে পারে।
আইনজীবী কৌস্তভ বাগচীর দাবি, দুর্নীতির রমরমা দেখেই সরে এসেছেন এজি। তিনি বলেন, এই দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের সঙ্গে কাজ করা মুশকিল। সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় যে উচ্চতার ব্যক্তিত্ব, আমরা ভাবতাম, তিনি কীভাবে এই সরকারের সঙ্গে কাজ করছেন। আদালতে তাকে বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখেছি। সুতরাং এটা হওয়ারই ছিল।
আপনার মতামত লিখুন :