কথা দিয়ে কথা রেখেছি: কক্সবাজারে রেলপথ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী


আজকালের কণ্ঠ প্রকাশের সময় : নভেম্বর ১১, ২০২৩, ১:৪৮ অপরাহ্ন /
কথা দিয়ে কথা রেখেছি: কক্সবাজারে রেলপথ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

আজকালের কন্ঠ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আজকে রেলের সঙ্গে সংযুক্ত হলো কক্সবাজার। এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকতে পেরে সত্যি আমি খুব আনন্দিত। একটা কথা দিয়েছিলাম, কথাটা রাখলাম। কক্সবাজার এমন একটি সমুদ্র সৈকত, যেটা বিশ্বে বিরল, বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম বালুকাময় সমুদ্র সৈকত। ৮০ মাইল লম্বা, সম্পূর্ণটাই বালুকাময়।’

শনিবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে দোহাজারী-কক্সবাজার ১০২ কিলোমিটার রেলপথ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

ক্ষমতার লোভে দেশের সম্পদ কারও হাতে তুলে দিতে রাজি হয়নি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছি। কিন্তু বাংলাদেশের গ্যাস বহির্বিশ্বের কাছে বিক্রি করতে রাজি হয়নি, তাই আমাকে একটি চক্র পরবর্তীতে ক্ষমতায় আসতে দেয়নি।

বেলা ১১টায় বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে কক্সবাজারে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। এরপর কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। এ সময় রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের কাছে ঝিলংজা ইউনিয়নের চান্দের পাড়ায় ঝিনুক আকৃতির দৃষ্টিনন্দন ছয় তলাবিশিষ্ট আইকনিক রেলস্টেশন নির্মিত হয়েছে। ২৯ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা এই আইকনিক রেলস্টেশন ভবনটি ১ লাখ ৮৭ হাজার ৩৭ বর্গফুটের। রেলস্টেশনটিতে থাকছে তারকা মানের হোটেল, শপিংমল, রেস্তোরাঁ, শিশুযত্ন কেন্দ্র, লাগেজ রাখার লকারসহ অত্যাধুনিক সুবিধা।

দৈনিক ৪৬ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতার শীতাতপনিয়ন্ত্রিত আইকনিক রেলস্টেশনে আরও আছে ডাকঘর, কনভেনশন সেন্টার, তথ্যকেন্দ্র, এটিএম বুথ ও প্রার্থনার স্থান।

মূল ভবনের নিচতলার রাখা হয়েছে টিকিট কাউন্টার, অভ্যর্থনা কক্ষ, লকার, তথ্যকেন্দ্র, মসজিদ, শিশুদের বিনোদনের জায়গা, প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জ ও পদচারী সেতুতে যাতায়াতের পথ। দ্বিতীয় তলায় শপিংমল, শিশুযত্ন কেন্দ্র, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি। তৃতীয় তলায় ৩৯ কক্ষবিশিষ্ট তারকা মানের হোটেল, চতুর্থ তলায় রেস্তোরাঁ, শিশুযত্ন কেন্দ্র, কনফারেন্স হল ও কর্মকর্তাদের কার্যালয়।

১০১ কিলোমিটারের দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে আইকনিক এই রেলস্টেশন। জানুয়ারি থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে বহু প্রতীক্ষার যাত্রীবাহী ট্রেন চলবে। দৈনিক একটি ট্রেন ঢাকা থেকে রাত সাড়ে ১০টায় যাত্রা করে ঢাকা বিমানবন্দর এবং চট্টগ্রাম স্টেশনে বিরতি দিয়ে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে কক্সবাজার পৌঁছাবে। কক্সবাজার থেকে দুপুর ১টায় যাত্রা করে রাত ৯টা ১০ মিনিটে ফিরবে ঢাকায়। ফিরতি পথেও চট্টগ্রাম এবং ঢাকার বিমানবন্দরে যাত্রা বিরতি করবে। মঙ্গলবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে ট্রেনটির।

অন্যদিকে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের পথে প্রথম ট্রেনটি ছেড়ে যাবে সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে, যেটি চট্টগ্রামে পৌঁছাবে দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে। দ্বিতীয় ট্রেননি সন্ধ্যা ৭টায় কক্সবাজার থেকে রওনা দিয়ে চট্টগ্রামে পৌঁছাবে রাত ১০টা ৫ মিনিটে। এসব ট্রেন রামু, ডুলহাজারা, চকরিয়া, সাতকানিয়া, দোহাজারী, পটিয়া, জানআলী হাট, ষোলশহর স্টেশনে যাত্রী ওঠানামা করাবে।

এ ছাড়া শুরুর দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে যাতায়াত করবে দুটি ট্রেন। চট্টগ্রাম থেকে একটি ট্রেন ছাড়বে সকাল ৭টায়, এটি কক্সবাজার পৌঁছাবে সকাল ১০টা ২০ মিনিটে। দ্বিতীয় ট্রেনটি বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে ছেড়ে কক্সবাজার পৌঁছাবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়।

২০১৮ সালে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের ৩০ জুন। পরে এক দফা বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ করা হয় ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এতে ব্যয় বেড়ে হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।