নিজস্ব প্রতিবেদক : ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংগালী জাতির ইতিহাসের এক রক্তাক্ত কলংকিত দিন।১৫ তারিখ ১ম প্রহরে খুনীচক্র ও তাদের মাষ্টারমাইণ্ডরা শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবার – স্বজনদের হত্যা করেনি তারা বাংগালী জাতির পিতাকে,মহান স্বাধীনতার স্থপতিকে,সর্বকালের সেরা বাংগালীকে,জাতির বিশ্বাসের মুল চেতনাকে হত্যা করেছে। বিশ্বের ইতিহাসে অনেক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে।
কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংগঠিত হত্যাকাণ্ডের মাঝে প্রকৃতিগত,গুনগত কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে।
আমি আজকের লেখায় বিশ্বের কিছু উল্লেখযোগ্য হত্যাকাণ্ডের শিরোনাম নিম্নে তুলে ধরছি:
সিনেটরদের হাতে রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার হত্যাকাণ্ড, Gettysburg Address-এর বক্তা মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন হত্যা,জন এফ কেনেডি হত্যা,আফ্রিকান নেতা মার্টিন লুথার কিং হত্যা,ভারতের মহান নেতা গান্ধীজী হত্যা,প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী হত্যা,তার ছেলে রাজিব গান্ধী হত্যা,পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো হত্যাকাণ্ড।
বর্নিত হত্যাকান্ডগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে এসব হত্যাকান্ডে শুধুমাত্র রাষ্ট্রনায়ক বা প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে।তার সাথে হয়তো সিকিউরিটির দায়িত্ব পালনের সময় কেউ মারা গেছে।কিন্তু মুজিব হত্যাকাণ্ডে দেখাযাবে তাঁর গোটা পরিবার, নিরীহ মহিলা ও শিশু সন্তানসহ নিকটতম স্বজনদের হত্যা করা হয়েছে।একজন রাষ্ট্রপ্রধান,তার গোটা পরিবার, তার আত্বীয়স্বজনকে একই সময়ে বিভিন্ন জায়গায় হত্যা করা বা একটি বংশকে সমূলে হত্যা করা বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন।
১৫ আগষ্টের হত্যাকাণ্ড একটি ব্যতিক্রমী রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। উপরে বর্নিত হত্যাকাণ্ড পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে নানাবিধ রাজনৈতিক বা গোষ্ঠীগত সংঘাতে রাষ্ট্রনায়ককে বা রাষ্ট্রের প্রভাবশালী ব্যক্তিকে কোন ব্যক্তি / গোষ্ঠী কতৃক খুন বা হত্যা করা হয়েছে।
কিন্তু মুজিব হত্যাকাণ্ডে দেখা যায় দেশী- বিদেশি খুনীচক্র ও তাদের নেপথ্যনায়কেরা দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করে বঙ্গবন্ধুকে,বাংগালীর মুক্তি ও স্বাধীকার আন্দোলনের অনুপ্রেরণাদানকারী মাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, সাদা মনের মানুষ বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের,সময়ের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল,শুভ্রতার প্রতিক ল্যাফটেন্যান্ট শেখ জামাল,দেশসেরা ক্রিড়াবিধ শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল,সদ্য বিবাহিতা শেখ জামালের স্ত্রী রোজি জামাল,বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ সন্তান শুভ্র সারল্যের প্রতিক১০ বছরের মাছুম শিশু শেখ রাসেল,মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম কারিগর বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি,তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি,ভগ্নীপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার কন্যা বেবী সেরনিয়াবাত, কচি শিশু সুকান্ত বাবু,আরিফ,রিন্টুখান ও সিকিউরিটি চিফ কর্নেল সাফায়াত জামিলকে।
এ হত্যাকাণ্ড ছিল নারকীয়, নৃশংস, বীভৎস, বর্বরতম।এ হত্যাকাণ্ডকে কারবালায় মুসলিম ইতিহাসের খলনায়ক ইয়াজিদ কতৃক মহানবী ( সাঃ) এর প্রিয় দৌহিত্র হযরত হাসান( রাঃ) – হোসাইন ( রাঃ) ও তাঁর স্বজনদের হত্যাকাণ্ডের সাথে তুলনীয়।পাপিষ্ঠ ইয়াজিদ যেমন মহানবী ( সাঃ) এর নিকটতম স্বজনদের নিশ্চিনহ করে নিরন্কুস ক্ষমতাধর শাসক হতে চেয়েছিল তেমনি পরাজিত পাকিস্তানীদের এদেশীয় এজেন্টরা তাদের পুর্ব-
পরিকল্পিত নীলনকশা বাস্তবায়নের জন্য শুধু বঙ্গবন্ধু নয় তার সকল নিকতাত্বীয় ও ঘনিষ্ঠ সহচরদের হত্যা করেছিল।
এরই ধারাবাহিকতায় খুনীচক্র ৩ নভেম্বর, ১৯৭৫ সালে জাতীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে এবং মুজিবীয় চেতনাকে ভুলুন্ঠিত করতে অসংখ্য নেতা কর্মীকে গুম খুন করতে থাকে।
রাখে আল্লাহ মারে কে? মহান আল্লাহর অপুর্ব দান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা তখন বিদেশে থাকায় খুনীরা তাদের খায়েশ পুরন করতে পারেনি বঙ্গবন্ধু পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করতে। দেশ বিরোধী চক্র,মুজিবীয় চেতনা বিরোধী অপশক্তি ২১ বার আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল।আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাকে শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের নিপিড়ীত নির্যাতিত মানুষের কল্যাণে বাঁচিয়ে রেখেছেন।ধনাঢ্য রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত দেশগুলো যখন কোন অসহায় নিপিড়ীত মানুষকে আশ্রয় দিচ্ছে না
তখন বঙ্গবন্ধু কন্যা ১১ লাখ রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে গোটা বিশ্বে মাদার অব হিউম্যানিটি উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন।
অন্তঃসত্ত্বা অসহায় নারী, শিশু হত্যা সর্বযুগে জগন্য অপরাধ হিসেবে স্বীকৃত।খুনিরা ও তাদের মাষ্টারমাইন্ডরা সে জগন্য কাজটি করেছে।শুধু তাই নয় খুনীদের বিচার করা যাবে না মর্মে বিশ্বের একমাত্র কাল আইন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ তারা জারি করেছে।খুনীচক্র এখানেই তাদের সীমাবদ্ধ রাখেনি।মুজিব হত্যাকাণ্ডের সুবিধাবাদীমহল তথা মাষ্টারমাইন্ডরা শাসনক্ষমতা দখল করে খুনীদের বিশ্বের বিভিন্নদেশে দুতাবাসে চাকুরী
দিয়েছে,জাতীয় সংসদে সাংসদ বানিয়ে পুরস্কৃত করেছে। এ প্রক্রিয়ায় শাসক শ্রেনী খুনীচক্রকে পুরস্কার, স্বাধীনতা বিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধীদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসানো এবং আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাপন্থীদের গ্রেফতার, গুম,হত্যা ইত্যাদির মাধ্যমে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।মুজিবীয় আদর্শ ও চেতনা মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে এমন হীন কাজ ছিল না যা খুনীচক্র করেনি।
বাংগালী বীরের জাতি।কোন অপশক্তির কাছে তারা মাথা নত করেনি।তাই বিশ্বের অহংকার বাংগালী জাতির প্রতি আমার কিছু প্রশ্ন :
১) যে মুজিব ৫৫ বছরের জীবনে গরীব, অসহায়, নিপিড়ীত, নির্যাতিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে
৪৬৮২ দিন কারাগারে কাটিয়েছেন, বাংগালী জাতিকে একটি স্বাধীন দেশ দিয়েছেন তাকে কাদের স্বার্থে কেন
হত্যা করা হল?
২)১০ বছরের শেখ রাসেল,তিন মাসের শিশু সুকান্ত বাবু,মা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বরেন্য ক্রীড়াবিধ সুলতানা
কামাল,, রোজি জামাল,অন্তঃসত্ত্বা আরজু মনি, বেবী সেরনিয়াবাত, শেখ নাসের তারাতো রাজনীতি করতো
না,তাদের কেন হত্যা করা হল?
৩)কেন কাদের স্বার্থে খুনীদের রক্ষার জন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে
কলন্কিত করা হল?
৪) এ নারকীয় হত্যাকাণ্ডের সুবিধাভোগী কারা?
৫)কে,কারা,কেন দেশদ্রোহী রাজাকার আলবদর,আসসামস নামক পাকি প্রেতাত্মাদের বাংলার মসনদে
আরোহনের সুযোগ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করা হল?
সবিশেষে ১৫ আগস্টের হত্যাকারী ও তাদের আশ্রয় প্রশ্রয়দাতা মাষ্টারমাইন্ডদের বলবো তোমরা হয়তো বুলেটের আঘাতে ব্যক্তি মুজিব ও তাঁরস্বজনদের হত্যা করেছো।কিন্তু মুজিবীয় চেতনা ও আদর্শপুষ্ট লাখো কোটি জনতাকে হত্যা করতে পারোনি।মুজিব আছে বীর বাংগালীর চেতনায় প্রতিটি ঘরে ঘরে।মানুষের শিলাপটে মনের গহীনে অংকিত আলোকিত এ নাম কেউ মুছতে পারবে না।যুগে যুগে মুজিবপ্রেমী জনতা বাংলার ঘরে আলো জ্বালাবে।
তাই আজ দৃশ্যমান বাস্তবতা হচ্ছে মুজিবের স্বপ্নের সোনার বাংলা আজ তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্যারিসম্যাটিক নেতৃত্বে সমগ্র বিশ্ব্রে উন্নয়নের রোল মডেল,মুজিবের ৭ মার্চের মহাকাব্যিক ভাষনকে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব প্রামান্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত, উন্নয়ন গবেষকরা আজকের বাংলাদেশকে দক্ষিন এশিয়ার এমার্জিং টাইগার হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান যথার্থই প্রমান করে মুজিবীয় দর্শন বিশ্বের অন্যতম সেরা দর্শন।
তাই কবির ভাষায় বলতে হয়-
যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরি মেঘনা বহমান
ততকাল রবে কীর্তি তোমার, শেখ মুজিবুর রহমান।
আজকালের কন্ঠ /রাকিব