উপকূলের শীতের আমেজে জমজমাট পিঠা উৎসব


আজকালের কণ্ঠ প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ২৫, ২০২৫, ৩:১৬ অপরাহ্ন /
উপকূলের শীতের আমেজে জমজমাট পিঠা উৎসব

মিলন বিশ্বাস, (সাতক্ষীরা প্রতিনিধি) : শীতের সকালে খেজুর রসের সুমিষ্ট ঘ্রাণ আর গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠার স্বাদ—এই দুটো মিলেই যেন শীতের আমেজ পরিপূর্ণ হয়। সেই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতেই সাতক্ষীরার শ্যামনগরের কাশিমাড়ীতে আয়োজিত হলো জমজমাট পিঠা উৎসব।

শনিবার (২৫ জানুয়ারি) কাশিমাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে কোস্টাল ইয়ুথ নেটওয়ার্ক-এর আয়োজনে দিনব্যাপী এই উৎসবে উপকূলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তিন শতাধিক যুবক, স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী, অভিভাবক, গ্রামের সুধীজন এবং মা-বোনেরা অংশগ্রহণ করেন।

উৎসবজুড়ে ছিল বাহারি পিঠার সমারোহ। আটটি স্টলে প্রায় ৩৫ প্রকারেরও বেশি ঐতিহ্যবাহী পিঠা পরিবেশন করা হয়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল—ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, দুধ চিতই পিঠা, ঝাল পিঠা, মালপোয়া, মেড়া পিঠা, মালাই পিঠা, মুঠি পিঠা, আন্দশা, কুলশি, কাটা পিঠা, কলা পিঠা, খেজুরের পিঠা, ক্ষীরকুলি, গোকুল পিঠা, গোলাপ ফুল পিঠা, লবঙ্গ লতিকা, রসফুল পিঠা, সুন্দরী পাকান, সরভাজা, পুলি পিঠা, পাতা পিঠা, পাটিসাপটা, পাকান পিঠা, নারকেলের সেদ্ধ পুলি, নারকেল জিলাপি, তেজপাতা পিঠা, তেলের পিঠা, তেলপোয়া পিঠা, চাঁদ পাকান পিঠা, ছিট পিঠা, পানতোয়া, জামদানি পিঠা, হাঁড়ি পিঠা, ঝালপোয়া পিঠা, ঝুরি পিঠা, ছাঁচ পিঠা, ছিটকা পিঠা, বিবিখানা, চুটকি পিঠা, চাপড়ি পিঠা, ঝিনুক পিঠা, সূর্যমুখী পিঠা, ফুল পিঠা, বিবিয়ানা পিঠা, সেমাই পিঠা, নকশি পিঠা, নারকেল পিঠা, নারকেলের ভাজা পুলি, দুধরাজ, ফুলঝুরি পিঠাসহ আরও অনেক বাহারি পিঠা।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ রনী খাতুন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন—এস এম আব্দুল হাই, অধ্যক্ষ, কাশিমাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রামকৃষ্ণ জোয়ারদার, আঞ্চলিক সমন্বয়কারী, বারসিক, এবং স্বপন দাস, সাকিলা পারভীন, মাসুদ হাসান, মাহফুজুর রহমান, ফারজানা ইসলাম-সহ কোস্টাল ইয়ুথ নেটওয়ার্কের অন্যান্য সদস্যরা।

উদ্বোধনী বক্তব্যে অতিথিরা বলেন, পিঠা উৎসব কেবলমাত্র খাবারের আয়োজন নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও শেকড়ের সঙ্গে মেলবন্ধন তৈরি করে। প্রযুক্তি নির্ভর ও যান্ত্রিক জীবনে যখন আবেগ, ভালোবাসা আর আন্তরিকতার পরিসর ছোট হয়ে আসছে, তখন এমন উৎসব নতুন প্রজন্মকে আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।

উপকূলীয় অঞ্চলে এমন আয়োজন নতুন নয়, তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে শীতের এই পিঠার মেলা। কিন্তু কোস্টাল ইয়ুথ নেটওয়ার্কের এমন উদ্যোগ তরুণদের ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে অনুপ্রাণিত করছে। উৎসবজুড়ে ছিল গ্রামবাংলার সুর, পিঠার ঘ্রাণ, আর ঐতিহ্যের আবহ। অংশগ্রহণকারীরা শুধু পিঠার স্বাদ উপভোগ করেই ক্ষান্ত হননি, বরং নিজেদের ঐতিহ্য নিয়ে নতুন করে ভাবতে শিখেছেন।

এই উৎসব একদিনের আয়োজন নয়, এটি একটি অনুভূতি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বহিঃপ্রকাশ। শীতের সকালে পিঠার স্বাদ আর আড্ডার উষ্ণতায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল কাশিমাড়ীর আকাশ-বাতাস। এমন আয়োজনে ভবিষ্যতেও উপকূলের মানুষেরা মেতে উঠবে, এটাই সবার চাওয়া।