মোঃ নাসিরউদ্দিন রাজশাহী বিশেষ প্রতিনিধি : আবহাওয়ার বিরুপ প্রভাবে, ও জনসচেতনতার অভাবে, দিনের পর দিন, আবহাওয়া মান গ্রাম বাংলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে তালের গাছ। রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে খ্যাত, গোদাগাড়ী, তানোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, নওগার পোরশা, নিয়াতপুর , আত্রাই সহ বিভিন্ন অঞ্চলের মাঠের ভিতরে জমির আইলে, পুকুর পাড়ে, বিভিন্ন রাস্তার ধারে, ও বাড়ির আনাচে কানাচে, অসংখ্য পরিমাণে লাইন ধরে সারি সারি তালের গাছ দেখা যেত।
দূরদূরান্ত থেকে এসব তালের গাছ দেখে মনে হতো, কি এক অপরূপ সৌন্দর্য, চৈত্র, বৈশাখ, মাসে তালপাতার আওয়াজে,ও তালের গাছের নিচে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা বিশ্রাম নেওয়ার ফলে কৃষক, কিষানিরা, ও রাখাল ছেলেরা গ্রাম বাংলার বিভিন্ন প্রকারের গানের সুর তুলে বাঁশের বাঁশি বাজিয়ে সময় কাটাতো তালের গাছের নিচে।
এছাড়া ভাদ্র মাসের সময় তাল পাকলে গাছ থেকে পাকা তাল পড়ার দুপ,ধাপ, শব্দে শুনে কচিকাঁচা যুবক-যুবতী বয়জেষ্ঠরা ছুটে যেত তালের গাছের গোড়ায়। কিন্তু কালের বিবর্তনে, আবহাওয়া বিরূপ প্রভাবে, জনসচেতনার অভাবে উল্লেখিত বিষয়গুলো এখন সবই স্মৃতি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এক একটি তালের গাছ ৩০ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়,প্রকারভেদে তালের গাছ দুই প্রকার হয়, পুরুষ তাল গাছ ও মেয়ে তাল গাছ, মেয়ে তালগাছের চাইতে পুরুষ তালগাছের চাহিদা বেশি, পুরুষ তালগাছের গোড়ালি দ্বারা বাড়িঘর, দোকানপাট, দোচালা খাড়া তিনের ঘর, গরুর গাড়ির ধুরি তৈরিতে পুরুষ তালগাছ বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ও তাল গাছের পাতা দিয়ে বিভিন্ন প্রকারের হাতপাখা, চাটাই, মাদুর, বাচ্চাদের বিভিন্ন প্রকারের খেলার পুতুল হরেক রকমের মালামাল তৈরি করা হয়। এছাড়া তালের ফল এবং বীজ দুটোই বাঙালি খাদ্য। কাঁচা পাকা দুই অবস্থাতেই তালের বীজ খাওয়া হয়। কচি তালের বীজের মধ্যে থাকে জলে ভরা তাল শাস যা চৈত্র মাসের সময় শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
এছাড়াও ভাদ্র মাসের শেষের দিকে, পাকা তাল দিয়ে তাল ফুলোরি, বিভিন্ন পিঠাপুলি তৈরি করা হয়। তালে আছে এক প্রকারের ভিটামিন এ,বি ও সি, জিংক, পটাশিয়াম, আয়রন ক্যালসিয়াম সহ আরো অনেক পদার্থ। এছাড়াও তালের গাছের মোচা থেকে রস সংগ্রহ করে তৈরি করা হয় গুড়, পাটালি, মিছরি, তাড়ি( এক প্রকারের চোলাই মদ) এ রস তাল গাছ থেকে টাটকা পেড়ে খেলে পায়খানা ক্লিয়ার সহ পেটের কয়েক প্রকারের রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করা যাই বলে বয়জ্যৈষ্ঠ দের অভিমত।
এদিকে অভিজ্ঞ মহলের দাবি কৃষি বিভাগ, ও বন বিভাগ, সহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তালগাছ নিয়ে জনসচেতনতা বাড়ালে আগের রূপে ফিরে আসবে তাল গাছের পরিবেশ।
আপনার মতামত লিখুন :