পদ্মা সেতু ও রেল পথ এই দুই প্রকল্পে বাজিমাত মংলা বন্দরের


আজকালের কণ্ঠ প্রকাশের সময় : নভেম্বর ১৫, ২০২৩, ১২:৫০ অপরাহ্ন /
পদ্মা সেতু ও রেল পথ এই দুই প্রকল্পে বাজিমাত মংলা বন্দরের

কাজী ওমর ফারুক, মোংলা : রাজধানী থেকে সমুদ্রবন্দর মোংলার দুরত্ব মাত্র ১৭০ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু ও রেল পথ চালুর পর ঝিমিয়ে থাকা বন্দরটিতে প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে। অন্যদিকে খুলনা থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ উদ্বোধনের পর সম্ভাবনায় নতুন পালক যুক্ত হয়েছে। ফলে মোংলা বন্দর ব্যবহারে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বাড়ছে।

নথি ঘেঁটে জানা যায়, মোংলা বন্দরে গত ১০ বছরে বছরওয়ারি জাহাজ আসার সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। দেশের অর্ধেকের বেশি আমদানি করা গাড়ি এখন মোংলা বন্দর দিয়ে আসে। বেশির ভাগ এলপিজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি হয় মোংলা বন্দর দিয়ে। মোংলা বন্দরের এখন যত জাহাজ ভিড়ে, তার এক-তৃতীয়াংশই এলপিজির জাহাজ। পদ্মা সেতুর কল্যাণে সর্বশেষ এ বন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহনে নতুন করে যুক্ত হয়েছে পোশাক রপ্তানি। এ বন্দর দিয়ে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে তিন গুণ।

মোংলার সম্ভাবনা নিয়ে বন্দরের সদস্য (হারবার ও মেরিন) ক্যাপ্টেন মো. আসাদুজ্জামান বলেন, মোংলা বন্দরের এখন যত জাহাজ ভিড়ে, তার এক-তৃতীয়াংশই এলপিজির জাহাজ। পদ্মা সেতুর কল্যাণে সর্বশেষ এ বন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহনে নতুন করে যুক্ত হয়েছে পোশাক রপ্তানি। পদ্মা সেতুর চালুর এক বছরেই এই বন্দর দিয়ে পোশাক রপ্তানি তিন গুণ বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, আগামী বছরের জুনের পর পশুর নদের ইনার বারে ড্রেজিংয়ের কাজ শেষ হলে এই বন্দরে বেশি গভীরতার (ড্রাফটের) জাহাজ ভিড়তে পারবে। তখন মোংলা বন্দর ব্যবহারে আরও আগ্রহী হবেন ব্যবসায়ীরা। ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার কথাটি মাথায় রেখে আমরা নানা ধরনের হ্যান্ডেলিং যন্ত্রপাতি কিনে প্রস্তুত হচ্ছি। মোংলা-খুলনা রেললাইন চালু হলে দেশের ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ভারত, নেপাল ও ভুটানের ব্যবসায়ীরাও এ বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হবেন।

সম্প্রতি বন্দর এলাকা সরেজমিনে দেখা যায়, একদিকে চলছে গাড়ি খালাসের কাজ। অন্যদিকে আধুনিক ক্রেন দিয়ে ইয়ার্ডে কনটেইনার পরিবহন করা হচ্ছে। বন্দরজুড়েই কর্মচাঞ্চল্য আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।

আমদানিকারকের প্রতিনিধিদের আনাগোনায় সরব এখন বন্দর এলাকা। এদিকে ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অনলাইনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে খুলনা থেকে বাগেরহাটের মোংলা বন্দর পর্যন্ত নির্মিত রেলপথ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এর মধ্য দিয়ে মোংলার সঙ্গে আন্তর্জাতিক যোগাযোগে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো।

ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিতে যে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে সেটা আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে খুলনা-মোংলা রেললাইন চালুর মধ্য দিয়ে। প্রাণ পাবে মোংলা ইপিজেড। নতুন নতুন শিল্পোদ্যোক্তরা আসবে এ অঞ্চলে।

খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক মো. মফিদুল ইসলাম টুটুল বলেন, খুলনার সঙ্গে মোংলা বন্দরের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ায় এ বন্দরের সক্ষমতা বহুগুণ বেড়ে যাবে। এতে প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল ও ভুটান রেলপথ দিয়ে সহজেই মোংলা বন্দর ব্যবহার করতে পারবে। আগে সড়ক ও নদীপথে এ বন্দরের পণ্য পরিবহন হতো। তখন খরচ বেশি হতো। এখন রেলপথে পণ্য পরিবহনে খরচ অনেক কমে যাবে। যার প্রভাব পড়বে পণ্য মূল্যের ওপর।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী বলেন, যে কোনো বন্দরের জন্য মাল্টিমডাল যোগাযোগ তো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতদিন আমরা নদীপথে পণ্য পরিবহন করতে পেরেছি। পদ্মা সেতু হওয়ার পর সড়কপথে পরিবহন করা হচ্ছে। এবার রেলপথে পণ্য পরিবহন করা হবে। এই রেললাইনের ফলে সবচেয়ে বেশি সুবিধা হবে স্বল্প খরচে বিশেষ করে কনটেইনার পরিবহন করা যাবে। এতে করে বন্দরের ব্যবহারও বাড়বে। গার্মেন্টস পণ্য আমদানি ও রপ্তানি সহজতর হবে। এছাড়া বিদেশি প্রকোটল ব্যবহার করে খুলনা-মোংলা রেললাইন দিয়ে নেপাল-ভুটানে পণ্য পরিবহন করতে পারবো।

উত্তরাঞ্চলের সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ স্থাপন হবে। এতে শিল্পায়ন গতিশীলতা পাবে। বাড়বে বন্দরের রাজস্ব।