আজকালের কন্ঠ ডেস্ক : দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইন ও বিধি সংস্কার না করে পুরনো কায়দায় একজন চেয়ারম্যান ও দুজন কমিশনার নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। হয়তো শিগগিরই তাদের নিয়োগের আয়োজনও সম্পন্ন হবে। প্রশ্ন হলো-তাহলে সংস্কারটা কবে হবে, কে করবে?
আগের বা পুরনো সিস্টেমে তিনজন নিয়োগ পাওয়ার বিষয়টি তো যেই লাউ সেই কদু। অন্তবর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের মধ্যে দুদক অন্যতম। নির্বাচন কমিশন সংস্কারেও কাজ করছেন বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে সংস্কার কমিশন। তবে সেখানেও কোনো ধরনের সংস্কার না এনে পুরনো ধাঁচে একজন চেয়ারম্যান ও চারজন কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাকি আছে পুলিশ সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ ও সংবিধান সংস্কার এবং প্রশাসনিক সংস্কার। এই চার জায়গায় নতুন নিয়োগের বিষয় নেই। ফলে তারা প্রয়োজনীয় কাজ শেষে সুপারিশ দেবে।
কিন্তু দুদকের সংস্কার প্রস্তাব তো অত্যাবশ্যকীয়। সেটি বিবেচনায় রেখেই টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানকে প্রধান করে সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। তারা কাজ করছেন। কিন্তু এখনও সুপারিশ দেয়নি।
এদিকে, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ দাখিলের আগেই ২০০৪ সালের দুদক আইনে সংস্থার জন্য চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগের লক্ষ্যে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সূত্র মতে, দুদকের চেয়ারম্যান ও কমিশনার পদে তিনজনের নিয়োগের ক্ষেত্রে অনেকগুলো নাম আলোচনায় এসেছে। এর মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন- চেয়ারম্যান হিসেবে সাবেক সচিব আইউব মিয়া, পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মেসবাহউদ্দিন ও সাবেক জেলা ও দায়রা জজ রফিকুল ইসলাম ও সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মোতাহার হোসেনের নামও রয়েছে আলোচনায়।
২০ বছর আগের দুদক আইনে প্রশাসন ক্যাডারের একজন সাবেক সচিবকে চেয়ারম্যান (ব্যতিক্রম ছিল ওয়ান ইলেভেনের সময়, চেয়ারম্যান লে. জেনারেল (অব.) হাসান মশহুদ চৌধুরী), জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত একজন কমিশনার (তদন্ত) ও প্রশাসন ক্যাডারের একজন সাবেক সচিবকে কমিশনার (অনুসন্ধান) করার বিধান রয়েছে। সে বিধান অনুযায়ী এতো বছর নিয়োগ হয়ে আসছে। কিন্তু ওয়ান ইলেভেনের পর প্রায় সবগুলো কমিশনই দেশের দুর্নীতি থামাতে ব্যর্থ হয়েছে। দেশ থেকে সীমাহীন অর্থ পাচার ঠেকানো যায়নি। ক্ষমতাসীনদের ব্যাপরোয়া দুর্নীতির লাগাম টানা যায় নি।
অক্টোবরে মঈন আবদুল্লাহর নেতৃত্বে তিন কমিশনার পদত্যাগ করলে দুদক কমিশনার শূন্য হয়। বিধি অনুযায়ী এই পদত্যাগের এক মাসের মধ্যে কমিশন পুনর্গঠন করার কথা। সেভাবেই সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। আর দুদকের সংস্কার না করে ওই কমিটি পুরনো ধাঁচেই তিনজনকে নিয়োগের জন্য ছয়জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপন করবে। এখন পর্যন্ত সেটাই ধারণা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে ২০ বছর আগে দুর্নীতির যে মাত্রা ছিল, এখন অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ। বিশেষ করে ওয়ান ইলেভেনের পরের সাড়ে পনেরো বছরে দুর্নীতি যেভাবে বেড়েছে, তার মধ্যে অর্থ পাচার দুর্নীতির প্রথম কাতারে। প্রকল্পের দুর্নীতি, টেন্ডার ও সরকারি কেনাকাটায় দুর্নীতিলব্দ অর্থও পাচার হয়েছে। অথচ এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালী কারো বিরুদ্ধে আইনিভাবে অনুসন্ধান তদন্ত করার এখতিয়ার এখন দুদকের হাতে নেই।
একদিকে সংশ্লিষ্ট অংশীজন মনে করেন, দুদক আইন সংস্কারের মাধ্যমে অর্থপাচারের সব ধরনের অপরাধ যেমন এর তফসিলভুক্ত করা দরকার, পাশাপাশি এই অপরাধ বিভাগের জন্য পৃথক একজন কমিশনার নিয়োগ দেওয়া জরুরি। অপরদিকে দুর্নীতি প্রতিরোধ বিষয়ক একজন কমিশনার নিয়োগের কথাও বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
অর্থাৎ দুর্নীতির ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে পাঁচজন কমিশনার নিয়োগ দিয়ে তাদের মধ্য থেকে একজনকে চেয়ারম্যান নিয়োগের কথা খোদ দুদকের দক্ষ যোগ্য ও সৎ কর্মকর্তারাও বলেছেন। তারাও মনে করেন, দুদকেরও জবাবদিহি থাকা দরকার। এ জন্য দুদককে সংবিধানের আওতায় এনে শপথের মাধ্যমে কমিশনার তথা দুদকের কাজকে শৃঙ্খলায় আনা যায়।
আপনার মতামত লিখুন :