মুখ থুবড়ে পড়ে আছে ৭ কোটি টাকার প্রকল্প


আজকালের কণ্ঠ প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪, ৩:২১ অপরাহ্ন /
মুখ থুবড়ে পড়ে আছে ৭ কোটি টাকার প্রকল্প

আজকালের কন্ঠ ডেস্ক : নির্মাণের ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও চালু হয়নি জয়পুরহাট পৌরসভার আধুনিক স্যানিটারি ল্যান্ড ফিল্ড ও পয়োবর্জ্য পরিশোধনাগার। জয়পুরহাট পৌর শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে আধুনিক পয়োবর্জ্য পরিশোধনাগারটি চালু না হওয়ায় পৌর সংশ্লিষ্টদের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা।

তদন্ত করে পয়োবর্জ্য পরিশোধনাগারটি চালুর দাবি জানান এলাকাবাসী। শহরের ময়লা আবর্জনাগুলো শহর থেকে তুলে পাহারপুর রোডের খনজনপুর এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে পৌরসভার ভাগাড়ে ফেলা হয়। এতে ব্যাপক দুর্গন্ধ ও পরিবেশ দূষণ হওয়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি হচ্ছে অভিযোগ এলাকাবাসীর। সমস্যা সমাধানে হিচমী-হিলি বাইপাস কাদিরপুরের স্থায়ী নির্মিত পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনাগারটি দ্রুত চালুর আশ্বাস পৌর সংশ্লিষ্টদের।

জানা গেছে, তৃতীয় নগর পরিচালনা ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ সেক্টর প্রকল্পের জয়পুরহাট পৌরসভার আধুনিক স্যানিটারি ল্যান্ড ফিল্ড ও পয়োবর্জ্য পরিশোধনাগারের কাজ ২০১৮ সালের ১০ আগস্ট শুরু হয়। এর আগে ৪.৯০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয় ১ কোটি ৩৯ লাখ ৮২ হাজার ৯২২ টাকায়। এরপর ৫ কোটি ৭১ লাখ ৮০ হাজার ১শ টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালের ১০ আগস্ট নির্মাণ সম্পন্ন করার পর পয়োবর্জ্য পরিশোধনাগারটি বুঝিয়ে নেন পৌরসভা । স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্মাণের পর থেকে এই পয়োবর্জ্য পরিশোধনাগারটির কার্যক্রম দৃশ্যমান দেখতে পাননি এলাকাবাসী। আর এতে শহরের যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে ময়লা আবর্জনা তুলে পয়োবর্জ্য পরিশোধনাগারটিতে না ফেলে ফেলা হয় পাহাড়পুর রোডের খনজনপুর এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে পৌরসভার ভাগারে। সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রতিষ্ঠানটি চালু না হওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। দ্রুত চালু করে পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্য সম্মত শহর গড়ার দাবি জানান এলাকাবাসীরা।

পাহারপুর রোডের পৌরসভার খনজনপুর ময়লার ভাগার এলাকার পথচারী মাহবুব হাসান, মোস্তাকিম, রাজু আহম্মেদ বলেন, এই রোড দিয়ে ঐহিত্যবাহী পাহারপুর পর্যটকসহ নওগাঁ, রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, নাটোরসহ বিভিন্ন এলাকার যানবাহন ও সাধারণ মানুষ চলাচল করে। কিন্তু যাওয়া আসার সময় যে দুর্গন্ধ, এই দুর্গন্ধে দম বন্ধ হয়ে যায়।

স্থানীয় শহিদুল, মারুফা আক্তার, মর্জিনাসহ অনেকে বলেন, এই ময়লার ভাগারের কারণে আমাদের চরম সমস্যা। প্রায় ২০ বছর ধরে শহরের সব ময়লা আবর্জনা এই ভাগারে ফেলা হয়। দুর্গন্ধে আমাদের বসবাস করা অযোগ্য হয়ে পড়েছে, ছোট বাচ্চাদের আরও সমস্যা, আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। অথচ কয়েকবছর আগে কাদিরপুরে কোটি কোটি টাকা খরচ করে পয়োবর্জ্য পরিশোধনাগার করে ফেলে রাখা হয়েছে।

কড়ই কাদিরপুর এলাকার আনোয়ার সাদাত, মনোয়ার হোসেন, আব্দুল মুমিন বলেন, পয়োবর্জ্য পরিশোধনাগারটি নির্মাণ করার পর ৫-৬ বছর হলো পড়ে আছে। এখানকার কোন কাজ আমরা দৃশ্যমান দেখিনি। সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ করে ফেলে রাখছে। পৌরসভার গাফিলতির কারণে প্রতিষ্ঠানটি চালু হয়নি। প্রতিষ্ঠানটি চালু হলে এলাকা উন্নত হবে, কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হবে। অবশ্যই এটি তদন্ত করা দরকার কেন চালু হলো না।

জয়পুরহাট পৌরসভার পয়োবর্জ্য পরিশোধনাগারের দায়িত্বে থাকা কর্মচারি ফারুক হোসেন বলেন, এই প্রকল্পের শুরু থেকে আমি আছি। কাজ শেষ হয়েছে ৫ বছর আগে। কিন্তু কবে এটা চালু হবে আমি বলতে পারবো না। এটা পৌরসভার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষরা বলতে পারবে। তারা আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দেয় আমরা সেভাবে চলি।

জয়পুরহাট পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মিজানুর রহমান বলেন, এখানে একটি কার্যক্রম চালু আছে। আর শহরের যে বর্জ্য সরবরাহ করার পর সেখানে ফেলা হয় না। কারণ সেখানে বিভিন্ন বর্জ্য, পলিথিন, প্লাস্টিক বা অন্যান্য আবর্জনাগুলো বাছাইয়ের জন্য প্রযুক্তি নেই। এ কারণে চালু করা সম্ভব হয়নি।

জয়পুরহাট পৌরসভার প্যানেল মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস ঝর্ণা বলেন, জয়পুরহাট পৌরসভার ময়লা আবর্জনা খনজনপুর এলাকার রাস্তার পাশে ফেলা হয়। এতে দুর্গন্ধে সাধারণ জনগন রোগে আক্রান্ত হয় ও স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে। এই ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য স্থায়ীভাবে হিচমী-কাদিরপুর এলাকার আধুনিক স্যানিটারি ল্যান্ডফিল্ড ও পয়োবর্জ্য পরিশোধনাগার নির্মাণ করা হলেও সেটি এখনো চালু হয়নি। বিগত সরকারের আমলে যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা কেন চালু করার পদক্ষেপ নেননি? এখন নতুন প্রশাসক দায়িত্ব তার সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সময়ে কীভাবে চালু করা যায় সে চেষ্টা করা হবে।